তলপেটের চর্বি বা ভুঁড়ি কমানোর সহজ উপায় জানুন
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি
প্রিয় পাঠক আপনাকে স্বাগতম, এই ওয়েবসাইটে আমরা স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আজকে আমরা পেটের চর্বি কমানোর সহজ উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো এবং সাদা কার্বোহাইড্রেট সম্পর্কেও আলোচনা করবো।
নিচের এই আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করেছি পেটের চর্বি কমানোর সহজ উপায় সম্পর্কিত সঠিক তথ্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার। এছাড়াও এর সাথে সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি যেগুলো আপনার অনেক উপকারে আসবে। তাহলে এবার চলুন সেই সকল বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
পেটের চর্বি কমানোর সহজ উপায়
পেটে চর্বি অনেকেই পছন্দ করেন না। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যাদের পেটে অতিরিক্ত চর্বি বা ভুরি থাকে তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস হার্ট অ্যাটাক সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। বিভিন্ন গবেষণার ওপর ভিত্তি করে আজকে আমরা জানবো কিভাবে আমরা পেটের চর্বি কমাতে পারি এবং কিভাবে আমরা পেটের চর্বি হওয়া বন্ধ করতে পারি। পেটে চর্বি হওয়া কিভাবে বন্ধ করবেন চলুন জেনে নেয়া যাক।
পেটের চর্বি কমাতে ট্রান্সফ্যাট খাওয়া বন্ধ করতে হবে
যেসব খাবারে ট্রান্সফ্যাট থাকে সেসব খাবার বর্জন করতে হবে। যেমন - কেক কুকিজ ডালডা জাতীয় খাবার অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার ভাজাপোড়া ইত্যাদি। ছয় বছর ধরে বানরের উপর একটি গবেষণা করা হয়। কিছু বানরকে ট্রান্সফ্যাট যুক্ত খাবার দেয়া হয় এবং কিছু বানরকে দেয়া হয় না। গবেষণা শেষে দেখা যায় যাদেরকে প্রচুর ট্রান্সফ্যাট যুক্ত খাবার দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে ভুঁড়ি বেড়ে গেছে ৩৩%। এছাড়াও ট্রান্সফ্যাট যুক্ত খাবার আরো বিভিন্ন রোগের সাথে কানেক্টেড যেমন - হার্টডিজিজ ইনফ্লামেশন ইত্যাদি।
জীবন থেকে স্ট্রেস কমাতে হবে
স্ট্রেস আমাদের শরীরে করটিসল নামে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত করে। এই করটিসল হরমোন কে মাঝে মাঝে স্ট্রেস হরমনও বলা হয়। এই কলটিসল হরমোন পেটে চর্বি জমাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যাদের শরীরে বেশি পরিমাণে করটিসল নিঃসৃত হয় তাদের মধ্যে ক্ষুধার ভাবটাও বেশি হয় বা তারা প্রচুর ক্ষুধা অনুভব করে।
এবং একই সাথে করটিসল হরমন পেটে চর্বি যাওয়াতে সাহায্য করে। কিন্তু আমরা অনেকেই আছি যাদের প্রফেশনটাই হচ্ছে স্ট্রেসফুল। যার কারণে প্রত্যেকদিন বিভিন্ন স্ট্রেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে আপনারা যেটা করতে পারেন সেটা হল সপ্তাহে একদিন বা দুই দিন নিজেদের জন্য রাখতে পারেন।
যে দিনগুলিতে আপনারা বিনোদনমূলক কাজ করবেন এবং এর জন্য আপনারা হ্যাপি থাকতে পারবেন। যেমন পরিবারের সাথে ঘুরতে যাওয়া বা খেলাধুলা। কাজগুলো করলে আপনার পেটে চর্বি কমাতে সাহায্য করবে।
চিনি যুক্ত খাবার খাওয়া কমাতে হবে
চিনি যুক্ত খাবার পেটে চর্বি জমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও যারা অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার খান তাদের জন্য আরও বিভিন্ন ধরনের রোগের রিস্ক আছে যেমন - ফ্যাটি লিভার ইনফ্লামেশন হার্ট ডিজিজ ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের সফট ড্রিংকস যেমন - কোক সেভেন আপ স্প্রাইট ইত্যাদি এগুলো নরমাল মিষ্টি জাতীয় খাবারের চেয়েও বেশি খারাপ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য।
তার কারণ হলো আপনি যখন সফট ড্রিংকসগুলো খাচ্ছেন আপনি কিন্তু জানেন না আপনি কতটুকু মিষ্টি খাচ্ছেন। এইসব ড্রিংসের মধ্যে ফসফরাস এবং ফসফনিক এসিডের বিভিন্ন কম্বিনেশন থাকার কারণে আপনার জীহ্বা আসলে ওই মিষ্টি স্বাদটা পায়না। যার ফলে হয় কি আপনি অনেক মিষ্টি খেয়ে ফেলেন কিন্তু আপনি বুঝতে পারেন না।
আপনি যখন অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাবার খান তখন খাবারটা চিবাচ্ছেন তারপর পেটে যাচ্ছে তারপরে হজম হচ্ছে। এরপরে মিষ্টিটা আপনার শরীরে লাগছে। কিন্তু আপনি সফট ড্রিংকস খাচ্ছেন তখন সেটা সরাসরি লিকুইড অবস্থায় আছে। এ দুই প্রসেস কিন্তু আপনার ব্রেনে সিগনাল দেয় ডিফারেন্টলি। এদিক থেকে চিন্তা করলেও যখন আপনি পান করছেন তখন আসলে বেশি মিষ্টি খাওয়া হয়।
নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে
ঘুম কে আমরা অনেকেই গুরুত্ব সহকারে দেখিনা। কিন্তু ঘুম আমাদের স্বাস্থ্যের ওজনসহ আরো অনেক কিছুর সাথে সাথে সম্পৃক্ত। ৬৮ হাজার মহিলাদের ওপর একটি গবেষণা করা হয় এবং সেখানে ১২ বছর ধরে আফজার্ভ করা হয়। এ গবেষণায় দেখা হয় যারা প্রতিদিন ৭ ঘন্টা বা তার থেকে বেশি পরিমাণে ঘুমিয়েছেন তাদের মধ্যে কি পরিমান ওজন বেড়েছে।
আর যারা প্রতিদিন পাঁচ ঘন্টার কম ঘুমিয়েছেন তাদের মধ্যে কতটুকু ওজন বেড়েছে। এই গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় যারা সাত ঘন্টা বা তার চেয়ে বেশি ঘুমিয়েছেন তাদের তুলনায় যারা পাঁচ ঘন্টার কম ঘুমিয়েছেন তাদের মধ্যে ওজন বেড়েছে সিগনিফিকেন্টলি বেশি।
সাদা কার্বোহাইড্রেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
সাদা কার্বোহাইড্রেট নিয়ন্ত্রণ বলতে সাদা ভাত সাদা রুটিকে বোঝায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা মোটা মানুষ তারা যদি প্রতিদিন ৫০ গ্রামের কম সাদা কার্বোহাইড্রেট খায় তাহলে তাদের পেটের চর্বির পরিমাণ কমে যায়।আবার যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রেও ডায়াবেটিস কমেছে প্রতিদিন ৫০ গ্রামের কম সাদা কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার ফলে।
তো আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে আপনি যদি সাদা ভাত সাদা রুটি না খান তাহলে আপনি খাবেন কি। আপনি খেতে পারেন বাদামি কালারের যে সমস্ত খাবার সেগুলো। যেমন লাল চালের ভাত বা বাদামি কালারের রুটি। আরও একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা সাদা ভাত সাদা রুটি খান তাদের তুলনায় যারা বাদামি কালারের ভাত বা রুটি খেয়েছেন তাদের পেটে চর্বি জমার যে প্রবণতা সেটা কমে গেছে ১৭%।
কিভাবে পেটের চর্বি কমাবেন জেনে নিন
আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া শাক-সবজি ফল ডাল ইত্যাদি এগুলো হলো আঁশযুক্ত খাবার। এই খাবারগুলো যখন পেটে যায় তখন পানি অথবা লিকুইড এডজার্ভ করে জ্বেল এর মত ফর্ম করে এবং পেট ভরা ভরা অনুভব হয়। যার ফলে আপনি যতটুক খাবার এমনিতেই খেতেন তা থেকে অল্পতেই আপনার পেট ভরে যাবে এবং আপনি অতিরিক্ত ক্যালরি নিবেন না এবং এটা আপনাকে এমনিতেই ওজন কমাতে সাহায্য করবে। ১১০০ জন মানুষের উপরে করা এক গবেষণায় দেখা যায় প্রতি ১০ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার।
- বাড়ানোরঃ দৌড়ানোটা যদিও একটু কঠিন কাজ। কিন্তু অনেক গবেষণাতে দেখা গেছে দৌড়ানোটা হচ্ছে পেটের চর্বি কমানোর জন্য সবথেকে ইফেক্টিভ ব্যায়াম। যদিও কিছু গবেষণায় আবার দেখা গেছে হাই ইন্টেন্সিটি ব্যায়ামটা কিছু বেশি ইফেক্টিভ।
- প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়াঃ প্রোটিন যুক্ত খাবার আপনাকে ক্ষুধার্ত করবে কম। আপনি ভাত খেলে যত দ্রুত ক্ষুধার্ত হবেন প্রোটিন খেলে তত দ্রুত ক্ষুধার্ত হবেন না। বিভিন্ন গবেষণাতে দেখা গেছে যারা খাবারে বেশি পরিমাণে প্রোটিন খায় তাদের মধ্যে পেটে চর্বি জমার পরিমাণ যারা কম প্রোটিন খায় তাদের থেকে অনেক কম।
- ওয়েট লিফটিংঃ ওয়েট লিফটিং টা সবার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। অনেকে আছেন যারা একটু বেশি মোটাসোটা তাদের ক্ষেত্রে ওয়েট লিফটিং টা একটু কঠিনই হয়ে যায়। তারা হচ্ছে দৌড়ানো বা হাঁটা থেকে শুরু করতে পারেন এবং পরবর্তীতে যখন আপনার ওজন একটু কমে আসবে তখন আপনি ওয়েট লিফটিং টা ট্রাই করতে পারেন।
- চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়াঃ চর্বিযুক্ত মাছ খেতে হবে কারণ চর্বিযুক্ত মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। এটা হচ্ছে ব্রেনের জন্য খুবই ভালো এবং শরীরের আরো অনেক জায়গাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে চর্বিযুক্ত মাছ লিভারের চর্বি এবং পেটের চর্বি দুইটাই অনেক সিগনিফিকেন্ট এমাউন্টে কমাতে সাহায্য করে।
কিন্তু যেটাই আপনি করেন মেইনলি এটা নির্ভর করে হচ্ছে আপনি কতটা সময় ধরে করছেন এবং কত ফ্রিকোয়েন করছেন। মানে হলো আপনি সপ্তাহে দুইদিন করছেন নাকি তিনদিন করছেন এবং যখন আপনি করছেন তখনকি ১০ মিনিট করছেন নাকি ১ ঘন্টা করে করছেন।
কিন্তু এটা খুবই ইফেক্টিভ একটা ব্যাপার আপনারা যারা সত্যিই পেটের চর্বি কমাতে চান এটা অবশ্যই ট্রাই করতে হবে। একটা গবেষণায় দেখা গেছে দৌড়ের সাথে ওয়েট লিফটের যদি কম্বিনেশন করা হয় সেটা হচ্ছে পেটের চর্বি কমানোর ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি ইফেক্টিভ।
তলপেটে চর্বি বা ভুঁড়ি কমানোর উপায়
তলপেটে চর্বি বা ভুঁড়ি আমরা কেউই পছন্দ করি না। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে যাদের তলপেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে থাকে তাদের ডায়াবেটিস বা হার্ট অ্যাটাক এর মত সমস্যা হতে পারে। এজন্য অবশ্যই তলপেটে অতিরিক্ত চর্বি কমে ফেলতে হবে। এজন্য যে উপায় গুলো রয়েছে সেগুলো নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।
শেষ কথা: পেটের চর্বি কমানোর সহজ উপায
প্রিয় পাঠক আপনি ওপরের আর্টিকেলের মাধ্যমে পেটের চর্বি কমানোর সহজ উপায় সম্পর্কিত অনেক তথ্যই জানতে পারলেন। তাই আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনি উপকৃত হবেন এবং এর মাধ্যমে আপনার প্রিয়জনদের উপকৃত হতে সাহায্য করবেন। আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে কিংবা আপনার কোন উপকারে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু, প্রিয়জন বা পরিচিত জনদের সাথে শেয়ার করবেন।
আর্টিকেলটি পড়ে তারাও উপকৃত হতে পারে। আপনার যদি আরোও কিছু জানার ইচ্ছে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্য জানতে এই লিংকে ক্লিক করুনআমরা চেষ্ট করবো সেগুলোর উত্তর দেওয়ার। আজ এই পর্যন্তই। সব সময় সুস্থ্য থাকবেন এবং ভালো থাকবেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url