ত্বকের যত্নে তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা - গরমে তরমুজের ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

গ্রীস্মকালে যে সব ফল বাজারে পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো তরমুজ। লাল রংয়ের সুস্বাদু রসালো এই ফলটি খেতে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেরই খুব ভালো লাগে। এটি খেতে অনেকটা রসালো মিষ্টি স্বাদের হয়। তীব্র গরমে পিপাসা মেটাতে ও আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে এই ফলের জুড়ি মেলা ভার। আজ আমরা জানবো নানান পুষ্টিগুণে ভরপুর তরমুজের ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে। তরমুজ আমাদের তীব্র গরমের দিনে শুধু শীতল রাখতে সাহায্য করে বা শরীরে জলের যোগান দেয় তা নয় নানান পুষ্টিগুণে ভরপুর তরমুজ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ত্বকের যত্নে তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা
হাঁপানি হৃদরোগ ও ওজন কমাতেও এই ফলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ফলে রয়েছে ভিটামিন সি ভিটামিন এ, যা শরীরে থাকা ফ্রি-রেডিক্যালগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। তরমুজের বেশিরভাগ অংশই জলে পরিপূর্ণ প্রায় ৯২% জল রয়েছে। তাই তরমুজ আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা থেকে শুরু করে বার্ধক্য জনিত সমস্যা থেকে রক্ষা করে। চলো জেনে নেওয়া যাক তরমুজের উপকারিতা সম্পর্কে।

তরমুজের পুষ্টিগুণ

  • ফ্যাটঃ ০.২গ্রাম
  • ক্যালোরিঃ ৪৫.৭
  • ফাইবারঃ ০.৬গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেটঃ ১১.৫গ্রাম
  • পটাসিয়ামঃ ১৭০মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়ামঃ ১০মিলিগ্রাম
  • কোলেস্টেরলঃ ০ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়ামঃ 1.৫২মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন সিঃ ১২.৩মিলিগ্রাম
  • লিকোপেনেঃ ৬.৮৯০ মাইক্রোগ্রাম

পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে তরমুজের উপকারিতা

তরমুজ একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল। এতে আপনার প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি এর প্রায় ১৫% রয়েছে ভিটামিন সি আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং শরীরে আয়রন শোষণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে যেমন ভিটামিন এ ভিটামিন বি৬পটাসিয়ামম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি।

তরমুজে থাকা ভিটামিন এ ত্বক এবং চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পটাসিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন বি৬ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।

তরমুজ আমাদের শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করে

আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে জল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। জল আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে সাহায্য করে। জলের অভাবে আমাদের চেহেরা রুক্ষ-শুস্ক দেখায়কিডনির সমস্যা আসে। বিশেষ করে যারা তীব্র গরমে বা রোদের মধ্যে কাজ করে তাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে জল ঘামের আকারে বের হয়ে যায়। তাদের কিছু সময় ছাড়া ছাড়া জল খাওয়া আবশ্যক। তরমুজ আমাদের শরীরে জলের চাহিদা পূরণ করে।
ত্বকের যত্নে তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা
এই ফলে রয়েছে প্রায় ৯২% জল এবং খুব কম ক্যালোরি। এই ফলটি খেলে আপনি হাইড্রেটেড থাকবেন এবং ফলটিতে বেশি পরিমানে জল থাকার ফলে আপনার পেট ভর্তি থাকে ও শরীরের ওজন বৃদ্ধি হয় না। আপনি হাইড্রেটেড থাকলে আপনার ত্বক শুস্ক হবে না এবং জল আপনার কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তীব্র গরমে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখলে শরীর ঠান্ডা থাকবে। তাই প্রতিদিন একটু করে তরমুজ খেলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।

তরমুজ খেলে কি ওজন বাড়ে

যদি আপনি ঔষধ না খেয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে রোগা হতে চান বা আপনার শরীর থেকে ফ্যাট দূর করতে চান তাহলে আপনার খাদ্যতালিকাতে অবশ্যই তরমুজ রাখা উচিত। যেহেতু এই ফলটিতে বেশিরভাগ জল থাকে এটিকে ব্রেক-ফাস্টের সাথে খেতে পারেন। এর বেশিরভাগটাই পানি থাকার কারণে আপনার শরীরে ক্যালোরি বা ফ্যাট না বাড়িয়ে আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। এটি অনেক সময় ধরে আপনার পেট ভর্তি রাখতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি রোগা হতে চান আপনার খাদ্যতালিকাতে অবশ্যই তরমুজ যোগ করুন।

হার্ট ভালো রাখতে তরমুজের উপকারিতা

হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য তরমুজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল। কোলেস্টেরল আমাদের হার্টের সমস্যার জন্য সবথেকে বেশি দায়ী। গবেষণায় দেখা গেছে যে লাইকোপিনযুক্ত খাবার খাওয়া আপনার হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে। লাইকোপিন একটি পদার্থ যা তরমুজে পাওয়া যায় এবং এটি ফলটিকে লালচে রঙ দেয়।

এমনকি টমেটোতেও এই উপাদানটি পাওয়া যায় কিন্তু এই পদার্থটি টমেটোর চেয়ে তরমুজে বেশি পাওয়া যায়। এই লাইকোপিন কোলেস্টেরল কমাতে পারে এবং এর ফলে আপনার হৃদরোগজনিত রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। তাই আপনার প্রতিদিনের খাওয়ারে তরমুজ অবশ্যই যোগ করুন।

দাঁতের সমস্যা সমাধানে তরমুজের উপকারিতা

প্রতিদিন একটু করে তরমুজ খাওয়ার ফলে এটি আমাদের দাঁতের মাড়ির রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। দাঁতের মাড়ির সমস্যা পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় ২৫% মানুষের দেখা যায়। এই পিরিয়ডেন্টাল রোগ থেকে দাঁতের ক্ষতি এবং অন্যান্য হৃদরোগ হতে পারে। পিরিয়ডেন্টাল রোগের প্রভাব কমাতে প্রধান উপাদান হল ভিটামিন সি। তাই আপনাকে যা করতে হবে তা হল আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় তরমুজ রাখতে হবে।

তরমুজের স্বাস্থ্য উপকারিতা

তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমানে জল ভিটামিন এ ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন সি যা আপনার ত্বককে নরম মসৃণ এবং কোমল রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি আমাদের শরীরে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় যা ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং ত্বকে রক্ত ​​​​প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে এবং ভিটামিন এ ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে

ও ত্বকের শুস্কতা প্রতিরোধ করে অন্যদিকে ভিটামিন বি ৬ ত্বকের ব্রেকআউটে সাহায্য করে। এছাড়াও তরমুজে রয়েছে লাইকোপিন যা আপনার ত্বককে সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কিন্তু আপনি অবশ্যই বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় সানস্ক্রিন মেখে বেরোবেন।

খালি পেটে তরমুজ খেলে কি হয়

তরমুজে পাওয়া লাইকোপিন ভিটামিন সি সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই সব যৌগগুলি আপনার প্রদাহ কম করতে সাহায্য করে। প্রদাহ বিভিন্ন রোগের কারণে হতে পারে যেমন-হৃদরোগ ক্যান্সার হাঁপানি টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং ফাইব্রোমায়ালজিয়া ইত্যাদি। এইসব প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সবথেকে সহজ উপায় হলো আপনার খাদ্যতালিকাতে তরমুজ যোগ করা।

হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা করতে তরমুজের উপকারিতা

হিটস্ট্রোক একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। যারা গরমের মধ্যে বা সূর্যের তাপে কাজ করে থাকেন তাদের হিটস্ট্রোক হওয়ার সম্ভবনা দেখা যায়। হিটস্ট্রোক হলে আমাদের শরীরে জলের অভাব দেখা যায় এবং শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যায়, আমাদের শরীর তখন আর এই হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া তাপমাত্রাকে কন্ট্রোল করে শরীরকে ঠান্ডা করতে পারে না। এই সময় শরীরের তাপমাত্রা মাত্র ১০-১৫ মিনিটে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটেরও বেশি হয়ে যায়

একে হিট স্ট্রোক বলে তরমুজ খেলে আপনি হিটস্ট্রোকের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারেন। তরমুজে রয়েছে ইলেক্ট্রোলাইট যা হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে পারে।গরমের দিনে আপনি যা করবেন তা হল তরমুজের রস পান করুন এটি আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখবে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এবং শরীরে জলের চাহিদা পূরণ করবে।

চোখ ভালো রাখতে তরমুজের উপকারিতা

তরমুজে লাইকোপিন নামক একটি যৌগ থাকে যা চোখের টিস্যুগুলির অবক্ষয় রোধে করতে পারে। লাইকোপিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং এটি প্রদাহ হ্রাসকারী হিসাবে কাজ করে। তাই তরমুজ খাওয়া আমাদের চোখের পক্ষে উপকারী।

কিডনি রোগী কি কি ফল খেতে পারবে

আমাদের দেহে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে দূষিত পদার্থ শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে। কিন্তু আমাদের কিডনি এই দূষিত পদার্থকে শরীর থেকে বের করে দেয়।এই কিডনিকে ভালো রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনিকে ভালো রাখার জন্য আপনাকে প্রতিদিন ১ গ্লাস তরমুজের রস পান করতে হবে। তরমুজের প্রধান পুষ্টি উপাদানের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম যা বিষাক্ত পদার্থের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং আপনার শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে।

তরমুজ খাওয়ার অপকারিতা

ঠান্ডা তরমুজ শরীরের জন্য ক্ষতিকর পাকস্থলিতে হজমের ক্ষতি করে। এ ছাড়া তরমুজ অনেক সময় গ্যাস্টিকের কারন।
  • ডায়রিয়া ও হজমের সমস্যা-- অতিরিক্ত তরমুজ খেলে ডায়রিয়া বমি বা হজমের সমস্যা হতে পারে।
  • কিডনির উপর চাপ-- যারা ইতিমধ্যে কিডনি সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়া উচিত নয়।
তবে এই অপকারিতা গুলি সাধারণত অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খেলেই দেখা দেয়। মাঝে মাঝে এবং সীমিত পরিমাণে তরমুজ খাওয়া সাধারণত নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর। তরমুজ খাওয়ার আগে বা কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।

তরমুজ খেলে কি ওজন বাড়ে

তরমুজ খেলে ওজন বাড়ে না। তরমুজ ওজন কমাতে সাহায্য করে। তরমুজে রয়েছে প্রায় ৯২% জল এবং খুব কম পরিমানে ক্যালোরি। ফলে তরমুজ খাওয়ার ফলে আমাদের অনেকসময় ধরে পেট ভর্তি থাকে কিন্তু শরীরে ফ্যাট বা কোলেস্টেরল জাতীয় পদার্থ জমা হয় না।

তরমুজ-এ কত ক্যালোরি

এক কাপ তরমুজে রয়েছে প্রায় ৪৫ ক্যালোরি। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি,ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান।

তরমুজের বীজের উপকারিতা

তরমুজের বীজে ম্যাগনেসিয়ামের মান অধিক থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তরমুজের বীজে থাকা জিঙ্ক আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।তরমুজের বীজে থাকা ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তরমুজের বীজে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত করে ও দাঁতের মাড়ি মজবুত করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url